mufti-azom-foijullha-ar-rajnoitik-chintadhara

মুফতী আজ‘ম ফয়জুল্লাহ্ রহ. এর রাজনৈতিক চিন্তাধারা

Original price was: 180.00৳ .Current price is: 93.00৳ . (48% ছাড়)

মুফতী আজম, মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. এর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও বর্তমান ইসলামী রাজনীতির আধুনিক রূপরেখা
ফিতনা-ফাসাদের উত্তাল এই জামানায় তিনি নীরবে, নিভৃতেই থাকতে চাইতেন। জৌলুসপূর্ণ লোক সমাগমের কোলাহল থেকে তিনি নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করতেন। মাহফিল ও মজলিসের মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জার প্রতি তাঁর কোন আগ্রহ ছিলো না। দ্বীনের নামে লোক দেখানো আয়োজন ও কর্মতৎপরতার ব্যাপারে তিনি বেশ নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি পাঠদান, ফতোয়া প্রদান, ওয়াজ-নসীহতের ময়দানে বেশ পরীক্ষিত ও সর্বজন সমাদৃত ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এগুলোর যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে তা তিনি কখনোই সাদরে গ্রহণ করতে পারেন নি। এজন্য একপর্যায়ে এ জাতীয় সকল দায়-দায়িত্ব হতে অব্যাহতি গ্রহণ করে মেখল নামক এক অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থান করে তাঁর অস্থির অন্তর উম্মতের নতুন এক কাফেলা তৈরীর স্বপ্ন দেখতে লাগল।
জীবনের প্রথম চার দশক তাঁর ইলমী উত্থান ও সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ভূমিকা ছিলো। আর এতে তাঁর সমসাময়িকদের মাঝে তাঁর সমকক্ষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিলো। সময়ের সাথে সাথে পুরো বাংলাদেশের ইলমী অঙ্গণগুলো তাঁর ইলমী খিদমতের সামনে ছাত্রত্বের আসন গ্রহণ করে। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের উলামায়ে কেরামও তাঁর ইলমী যোগ্যতার স্বীকৃতি প্রদান করেন।
তিনি ইলমী ময়দানে যতটা সমাদৃত ছিলেন, তারচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিলেন তাক্বওয়া-তহারাত, আল্লাহমুখীতা, খোদাভীতি ও দুনিয়াবিমুখতার দিক দিয়ে। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে এই মহান সাধকের মস্তি®েক যেমনিভাবে ইলমের তেজ দান করেছিলেন, তেমনিভাবে তাঁর অন্তরকে তাক্বওয়া-তাহারাতের সজীবতা দ্বারা ভরপুর করে দিয়েছিলেন। তিনি খোদাভীতি ও দ্বীনী ব্যাপারে সতর্কতার এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যে, তাঁকে নিয়ে তাঁর আসাতিযায়ে কেরামও গর্ববোধ করতেন।
নবুওয়াতের উত্তরসূরীদের মাঝে যে জিনিস তাঁকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে, তা কেবল তাঁর ইলমের গভীরতা, তাকওয়া ও দুনিয়াবিমুখতাই নয়; বরং তা হচ্ছে তাঁর বিপ্লব সৃষ্টিকারী ইসলাহী ফিকির ও সংস্কারমূলক কাজের চিন্তা-ভাবনা। যার মাধ্যমে তিনি দ্বীনের প্রতিটি কাজের ভিতরে ও বাহিরে যে ভুল প্রথা, রুসম-রেওয়াজ ও আকাবীর-আসলাফের তরীক্বার সাথে সাংঘর্ষিক পন্থা প্রবেশ করেছিলো, সবগুলোকে চিহ্নিত করেছেন।
হযরত মুফতীয়ে আজম রহ. কেবল নির্জনতা পছন্দকারী মেজাযের ছিলেন তাই নয়; বরং তিনি নুতন নতুন ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির ফলে সামষ্টিক কাজসমূহে যে ভুল পন্থা মেশানো হয়েছিলো, এগুলোকেও চিহ্নিত করে দূর করেছেন। এই ভুল পন্থাগুলোকে দর্শক বাহ্যিক দৃষ্টিতে হয়তোবা সামান্য বিষয় মনে করবে; কিন্তু হযরতের দূরদর্শিতার সামনে এগুলোকে সুস্পষ্ট গোমরাহী মনে হয়েছিল। যমানার আলো বাতাসের পরিবর্তনে যারা গা ভাসিয়ে দিয়েছিল, তাদের কাছে হয়তবা এই অশুদ্ধ পন্থাগুলো ছোট ছোট বিষয় মনে হতো; কিন্তু আকাবীর-আসলাফের চিন্তা-চেতনা লালনকারী মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. এর কাছে এগুলো একেবারেই অসহ্যকর মনে হয়েছিল।
প্রচলিত ইসলামী রাজনীতিও এমন একটি দ্বীনী ও সামগ্রিক বিষয় ছিলো। যা মুফতীয়ে আজম রহ. এর দৃষ্টিতে সুনাম-সুখ্যাতি, ক্ষমতা ও নেতৃত্বের লোভসহ অসংখ্য শরীয়তবিরোধী উপাদানের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। দাওয়াত এখানে উদ্দেশ্যহীন, হিকমত ও মাসলাহাতের নাম দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার ও তোষামোদনীতিই রাজনীতিবিদদের মূল কাজে পরিণত হয়েছিল।
সম্ভবতঃ কিছু লোক এ কথা মনে করতে পারে যে, নির্জনপ্রেমী ও সর্বদা কিতাব নিয়ে পড়ে থাকার দরূণ হযরতের মাঝে রাজনীতির ব্যাপারে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা তৈরী হয়েছিল। তাদের এ ধারণা একেবারেই অবাস্তব ছিলো। কেননা, দরস-তাদরীস, ওয়াজ-নসীহত ও সমসাময়িক বিষয়ে ফতোয়া প্রদান, জাতীয় দ্বীনী কার্যক্রমের মাধ্যমে যে সুনাম-সুখ্যাতির আলোকরশ্মি পৃথিবীর দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছিল, তা কি কেবলমাত্র কোন নির্জনপ্রেমী ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব ছিলো?
যে সকল মহামনীষি সারাদিন কিতাব নিয়ে পড়ে থাকতেন এবং কিতাবের প্রতি তাদের মন লেগে থাকতো, তারা কি সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন হতে গাফেল থাকতেন? পূর্বসুরীদের এই মুখপাত্ররা কি ইসলামের বিপ্লবী দর্শনের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন ছিলেন?
রাজনীতির ব্যপারে মুফতীয়ে আজম রহ. এর রচনা, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র ও ফতোয়া-ফারায়েজ হতে এ কথাটি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, তিনি কখনোই ইসলামী রাজনীতির বিরোধী ছিলেন না বরং তিনি ইসলামী রাজনীতির একজন দরদী ও একনিষ্ঠ পাহারাদার ছিলেন। কিন্তু তাঁর অসন্তুষ্টির জায়গা ছিলো, বর্তমান রাজনীতির প্রচলিত কর্মকৌশল। কর্মপদ্ধতিতে ভুল থাকার কারণে মুফতীয়ে আজমসহ আরো অনেক উলামায়ে কেরাম ইসলামী রাজনীতির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন।
দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা ও দারুল উলুম করাচীর অনেক আকাবীর উলামায়ে কেরামের অবস্থান এটাই ছিলো যে, দাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির উপাদানমুক্ত সরাসরি ইসলামী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। এ ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ. এর দৃষ্টিভঙ্গিও আহলে ইলমদের অজানা নয়। আল্লামা মনজুর নুমানী রহ. এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘মাওলানা মওদুদীর সাথে আমার সাহচর্য্যরে ইতিবৃত্ত’র মাঝেও তিনি এ বিষয়ক কিছু তিক্ত বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
চলবে…

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “মুফতী আজ‘ম ফয়জুল্লাহ্ রহ. এর রাজনৈতিক চিন্তাধারা”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
Shop
0 items Cart
My account